Header Ads

বাংলাদেশ ব্র্যান্ডিংকে জাতীয় ভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন রূপে ফুটিয়ে তুলতেই হবে




 বাংলাদেশ ব্র্যান্ডিংকে জাতীয় ভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন রূপে ফুটিয়ে তুলতেই হবে


বাংলাদেশ এর পোশাক রপ্তানীর ব্র্যান্ডিং আন্তর্জাতিক ভাবে কি অবস্থানে রয়েছে  তা যদি পর্যালোচনা করি, তাহলে আমাদের এক নজর গুগল সার্চ দিয়ে দেখতে হবে।  সকল ধরণের নেতিবাচকতায় পূর্ণ একটা ভয়াবহ চিত্র ফুটে ওঠে, যা আন্তর্জাতিক বাজারে মার্কেটিংয়ে এবং প্রতিযোগী দেশ গুলোর সাথে পাল্লা দেয়ার ক্ষেত্রে নানা ভাবে আমাদের লজ্জিত হতে হয়। যে কোন লেভেলের ক্রেতা আমাদের সম্বন্ধে অকপটে সকল নেতিবাচক খবর গুলোর হালনাগাদ তথ্য দিতে পারে। আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় বাড়াবাড়ি রকমের নেতিবাচক আবেগের অর্গানিক রিচ এর ফলাফলে আজকের এই দুর্দশা। দেশের কোন স্থানে এতটুকু নেতিবাচক কিছু হলেই আমরা ফেসবুকে শেয়ার দিয়েই ক্ষান্ত হইনা, সকলে লাইক কমেন্ট শেয়ার করে সেটাকে ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়ার জনপ্রিয় নিউজে পরিণত করি। শুধুমাত্র আমার পোষ্টে সকলেই লাইক কমেন্ট করছে এই ভ্রান্তি থেকেই আমরা নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনি। বাংলাদেশের গার্মেন্টস ইন্ডাষ্ট্রি নিয়ে গুগলে সার্চ দিলে আমাদের নিম্নলিখিত নেতিবাচকতা গুলো সাধারণত ফুটে ওঠে। এর জন্য ১০০% দায়ী আমরা সকলেই।


১.  প্রথম উঠে আসে রানা প্লাজার ধ্বস। শ্রমিকের দুর্দশার চিত্র। আমাদের দেশের গার্মেন্টস ইন্ডাষ্ট্রির মূল ব্র্যান্ডিংয়ে রূপান্তরিত হয়ে গেছে রানা প্লাজা দুর্ঘটনা।  শুধুই আমাদের আবেগের কারণে। 


২. অন্যান্য সকল সময়ের কারখানার শ্রমিক গণের মিছিল, মিটিং ও  আন্দোলনের বিধ্বংসী চিত্র সমূহ। বেতন বাড়ানোর আন্দোলনের সকল ধরণের হালনাগাদ চিত্র।  

৩. আমাদের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, হরতাল, ধ্বংস, সংঘাতের ছবি গুলো। বন্যা, জলোচ্ছাস, ঘূর্ণিঝড়ের চিত্র গুলো।   

৪. এরপর আসে আমাদের ট্রাফিক জ্যামের শহরের দুর্দশার চিত্র। ঘুষ দুর্নীতি জাতীয় সকল অসহায়ত্বের চিত্র সমূহ। 


ভিয়েতনাম নিয়ে গুগল করে দেখুন এই সকল কিছুর কোনটাই খুঁজে পাবেন না। পাবেন নয়নাভিরাম ভিয়েতনামের সুন্দর পর্যটনের দৃশ্য, উন্নতির ছোঁয়া, সুদর্শিনী শ্রমিক হাঁসিমুখে খুব গোছানো কারখানায় কাজ করছে, সুন্দর সুন্দর কারখানার চিত্র। এই ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশনের যুগে এই কাজটা অত্যন্ত সহজসাধ্য। 


আমাদের কোন সরকার কিংবা কোন প্রতিষ্ঠান জাতীয় ভাবে এই ব্যাপারে কোন ধরণের ইনিশিয়েটিভ নেয়নি, তাই আমাদের গুগল সার্চের এই দুর্দশা। বাংলাদেশ এই সকল চিত্রকে ছাপিয়ে আমাদের সকল নামকরা কারখানার চিত্র, এক্সপোর্টের জন্য আমরা যা কিছু করি তার নমুনা, ২২৫ এর বেশি পরিবেশ বান্ধব কারখানা, নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থার ছবি ইত্যাদি সকল কিছু এসইও করে গুগলের প্রথম পেজে নিয়ে আসা এখন আমাদের ফ্রিল্যান্সার বাচ্চা ছেলেদের কাজ। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় জাতীয়ভাবে অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে এই কাজটা করতে পারলে আমাদের দেশের ব্র্যান্ডিংয়ে আমরা এগিয়ে যেতে পারব। এই নতুন সরকার শুধুমাত্র এই বিষয়ে একটু সজাগ দৃষ্টি প্রদান করলেই এই ব্যাপারে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতাম। দুর্নীতি দায়গ্রস্ত কারো কাছেই এই ব্যাপারে সঠিক সমাধান আমরা কোনদিনই আশা করতে পারিনি।

অর্ডার এর ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করে ১০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানী লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ব্র্যান্ডিং কেন গুরুত্বপূর্ণ।


আমাদের রপ্তানী বৃদ্ধির জন্য ব্র্যান্ডিং কেন এই মূহুর্তে ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই কথা তো আলোচনার দরকার নাই। কিন্তু ব্র্যান্ডিং মানেই তো "শু -শা" দেখানো। ব্র্যান্ডিং মানেই তো উজ্জ্বল আলোর ঝলমলে ঝলকানি। তাই এই আলোচনা আপনাদের কাছে খুব সাধারণ গোছের আলোচনা মনে হবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির বিবেচনায় বেশ কিছু বড় কারখানার অর্ডারের শোচনীয় অবস্থা দেখে এই আর্টিকেল লিখার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করলাম। 


“ব্র্যান্ড” শব্দটির সাথে আমরা সকলেই দারুন ভাবে পরিচিত। ব্র্যান্ড বলতে এমন কোন নাম, শব্দ, ডিজাইন, প্রতীক বা অন্য কোন ফিচার বোঝায় যা কোন একজন বিক্রেতার পণ্য বা সেবাকে অন্যান্য পণ্য বা সেবা থেকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করে। অর্থাৎ এটি মূলত বাজারে আপনার প্রোডাক্ট বা প্রতিষ্ঠানের জন্য নিজস্ব জায়গা তৈরি করে। এ প্রক্রিয়াকেই ব্র্যান্ডিং বলা হয়ে থাকে। 


যেমন ডেনিম জিন্সের পোশাক বলতেই বাংলাদেশের প্যাসিফিক জিন্সের নাম ভেসে ওঠে। জ্যাকেট জাতীয় পোশাক বলতেই ইয়াংওয়ান , স্নোটেক্স, ডেবোনেয়ার গ্রূপের নাম ভেসে ওঠে। টিশার্ট, পোলো শার্ট বলতেই ডিবিএল, ইপিলিয়ন, ভিয়েলাটেক্স, ফকির গ্ৰুপ, স্কয়ার, ইস্কয়ার সহ আরো ভাল কিছু কারখানার নাম ভেসে ওঠে। বড় কারখানায় যে কোন ধরণের ওভেন অর্ডার করার জন্য হামীম, আল-মুসলিম, বেক্সিমকো, পলমল গ্ৰুপের নাম সারা বিশ্বে এখন সুপরিচিত। ছোট কারখানায় যে ভাল মানের দামি কাস্টমারের ছোট অর্ডার করা যায় এই ব্যাপারটা আলোচনায় আসলেই কিউট ড্রেসের চেহারা আপনাদের চোখের সামনে ভাসে। এইটা পুরোপুরি একটা বিশ্বাসের ব্যাপার। পূর্ণ আস্থার ব্যাপার,এই ব্যাপারটা আপনা আপনি ঘটতে হবে। নাম টা আপনার মাথায় দ্রুত এবং ভক্তির সাথে চলে আসতে হবে। এই ব্র্যান্ডিং ইমেজ টা প্রতিষ্ঠিত করতে এই কোম্পানী গুলোকে কিন্তু বছরের পর বছর অনেক ধরণের চর্চার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে।


ব্র্যান্ডিং মানে শুধু প্রতিষ্ঠান বা প্রোডাক্টের লোগো বা নামকে চেনানো নয়। এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। প্রতিনিয়ত আপনার চোখের সামনে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন আসে। সামাজিক মেলামেশাতেও অনেক প্রোডাক্টের নাম শুনে থাকেন আপনি। এগুলো ব্র্যান্ডিংয়ের মধ্যে পড়ে। এছাড়া প্রোডাক্ট প্যাকেজিংয়ের ধরন বা প্রোডাক্ট ব্যবহারের অভিজ্ঞতাও ব্র্যান্ডিং!


একটা উদাহরণ দেয়া যাক। আপনাকে কয়েকটি ডেনিম ব্র্যান্ডের নাম বললেই লিভাইস জিন্সের নাম সবার আগে মনে পড়বেই। অন্যান্য আরো অনেক গুলো ব্র্যান্ডের নাম বলতে বলা হলে এর মধ্যে ‘লিভাইস’ নামটা থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। যেমন ফর্সা হওয়ার ক্রীম মানেই হল ফেয়ার এন্ড লাভলী। নিশ্চিতভাবে ঝামেলা ছাড়া ব্যবহার করার প্রেস্টিজ ফোন মানেই হল লেটেস্ট মডেলের আইফোন। স্পোর্টস সামগ্রী মানেই এডিডাস, পুমা, নাইকি। আস্থার ব্যাপারটা এমন দারুণ যে, আমরাই এই ব্র্যান্ড গুলোর জিনিষ পত্র যে কোন ধরণের চড়া মূল্যে ক্রয় করতে ও রাজি থাকি। 


বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কেন ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য বড় আকারের বিনিয়োগ করে, তার কয়েকটি কারণ রয়েছে। ব্র্যান্ডিংয়ের গুরুত্ব নিয়ে শত আলোচনা আপনারা শুনেছেন কিন্তু তার পরে ও লিখছি। 


১. ব্র্যান্ডিং আপনার পণ্য বা প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠানের ইমেজ কে  মানুষের মধ্যে এবং ভোক্তা দের মাঝে আলাদাভাবে পরিচিত করে। নতুন একটা ধারণা ছড়িয়ে দেবে । একজন মানুষের যেমন কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থাকে। তার আচার-আচরণ, পছন্দ-অপছন্দ, জামাকাপড়ের ধরন, বন্ধুবান্ধব, কাজ ইত্যাদির মাধ্যমে তার একটি স্বকীয় পরিচয় আমাদের মাঝে তৈরি হয়। একটি পণ্য বা প্রতিষ্ঠানেরও এমন কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে যেগুলোর মাধ্যমে আপনি তাকে তার স্বকীয় আলাদা করে চিনতে পারেন।

২. ব্র্যান্ডিং ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় আপনার পণ্য বা প্রতিষ্ঠানকে আলাদা অবস্থান দেয়। বাজারে একই ধরনের বিভিন্ন পণ্য পাওয়া যায়। কিন্তু যেসব পণ্যের ব্যাপারে মানুষের ইতিবাচক ধারণা বেশি, সেগুলোর বিক্রির হারও বেশি। যেমন, জুতার বাজারে ‘বাটা’ ‘এপেক্স’ ব্র্যান্ডের আলাদা কদর রয়েছে।

৩. কাস্টমারদের সাথে আপনার পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের একটি সম্পর্ক তৈরি হয় ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে। শুনতে অদ্ভুত শোনালেও এটা সত্যি! কোন পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডিং ভালো হলে কাস্টমারদের আস্থা অর্জন করা সহজ হয়। এতে করে তারা বারবার আপনার পণ্যের কাছেই ফিরে আসবে।

৪. প্রতিষ্ঠানে ভালো কর্মী আকৃষ্ট করতে আপনাকে সহায়তা করে ব্র্যান্ডিং। 

ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে আপনার পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের একটি সামাজিক মূল্য তৈরি হয়। এর মাধ্যমে আপনার প্রতিষ্ঠানে কাজ করার জন্য মানুষের আগ্রহ বেড়ে যায়। যেমন, মাইক্রোসফট বা গুগলের কথা ধরা যাক। ব্র্যান্ড হিসাবে তাদের পরিচিতি এত ভালো যে পৃথিবীর সবচেয়ে দক্ষ ও মেধাবী কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারদের স্বপ্ন থাকে এ কোম্পানি গুলোতে কাজ করার।


স্বস্তা টিশার্টের অর্ডারের একটা অর্গানিক ব্র্যান্ডিং এর তকমা আমাদের শরীরে সেঁটে গিয়েছে কালের বিবর্তনে। একটা বিষয়ে আমরা অবশ্য চায়না কে টেক্কা দিয়েছি, সেটা হল ৮০ সেন্টে চাইনীজ কাস্টমারগণ আমাদের কাছ থেকেই টিশার্ট কিনতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। পৃথিবীর কোন দেশ এত কম দামে টিশার্ট দিতে পারেনা। অনেক সময় বঙ্গবাজারের বাংলা গার্মেন্টস গুলোও দিতে পারেনা, কিন্তু আমরা আশ্চর্য এক জাদুর কাঠির গুণে এই অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছি।


এরপর আসি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে, সভা সেমিনারে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিংয়ে ডঃ ইউনূসের মত নামকরা ওমর ইশরাক, রুশনারা আলী জাতীয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের নামকরা ব্যক্তি সমূহের প্রোফাইল ব্যবহার করে আমরা নিঃসন্দেহে পজিটিভ একটা ইমেজ প্রতিষ্ঠিত করতে পারি।


জাতীয় ভাবে আমাদের দেশের স্ট্রেংথ গুলোকে এক সাথে ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে তুলে ধরার ক্ষেত্রে করণীয় সকল কিছু করতে শুরু করা।


আমাদের পরিশ্রমী হাত গুলোর সেলাইয়ের কোয়ালিটি এখন তো জগৎ সেরা, আমরা টিশার্টের পরেই ডেনিম হাবে পরিণত হয়েছি, আমাদের আর্টিজানদের ক্রাফ্টসম্যানশিপ, হস্তশিল্পের নৈপুণ্য, বাংলার মসলিন, জামদানী ইত্যাদি সকল ঐতিহ্য গুলো গ্লোবাল ক্যাম্পেইন, ইনফ্লুয়েন্সার পার্টনারশিপ, কনটেন্ট মার্কেটিং, এসইও, আন্তর্জাতিক লবিষ্ট নিয়োগ ইত্যাদি অনেক ভাবেই তো আমাদের ব্র্যান্ডিং করা যায়। দরকার শুধুই আন্তরিকতায় পরিপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ।


আবু কাউছার

No comments

Powered by Blogger.